কোয়ারেন্টিনের নামে মানবেতর জীবন, এসপির নির্দেশে উদ্ধার

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কছমার হাওর থেকে ১৭ পরিবারের ৬০ সদস্যকে উদ্ধার করে যার যার ঘরে পাঠানো হয়। ছবি : এনটিভি
আওয়ামী লীগের এক নেতার নির্দেশে নির্জন হাওরে ঝুপড়িঘর তুলে ১৭টি পরিবারের ৬০ সদস্যকে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নজরে এলে তাঁর নির্দেশে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজেদের ঘরে ফিরে গেছেন ওই ৬০ জন।গতকাল মঙ্গলবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কছমার হাওর থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।জানা গেছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পোশাক কারখানা, কলকারখানা ও বাসাবাড়িতে কাজ করতেন ওই ১৭টি পরিবারের ৬০ সদস্য। করোনাভাইরাসের কারণে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ ও বাসার মালিকরা তাঁদের ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটি পেয়ে গত ১৩ ও ১৪ এপ্রিল তাঁরা বাড়িতে চলে আসেন। বাড়ি আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক সরকারের নির্দেশে এলাকাবাসী ওই পরিবারগুলোকে নির্জন কছমার হাওরের মধ্যে টিন ও বন ছন দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে কোয়ারেন্টিনে রাখে। 
কোয়ারেন্টিনে থাকা কৃষ্ণ দাস বলেন, প্রায় ১৩ দিন ধরে আমরা এখানে আছি। আমরা কুকুর-বিড়ালের মতো জীবনযাপন করছি। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বারবার ফোন করলেও আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
রিতা রানী বলেন, আমরা দুই বোন এই ঝুপড়িঘরে মা-বাবা ছাড়া থাকি। রাতে এক বোন ঘুমালে আরেকজন সজাগ থাকি। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। আমরা এই নিষ্ঠুর শাস্তি থেকে মুক্তি চাই।
মঙ্গল দাস বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা দীপক সরকার চাপ সৃষ্টি করে আমাদের এখানে রেখেছেন। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 
নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তেই এই ১৭টি পরিবারকে টিন দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। খবর পেয়েই স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাঁদের জন্য খাবার পাঠানো হয়েছে। তাঁদের হাওর থেকে এনে নিজ গ্রামে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ফকরুজ্জামান জুয়েল বলেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের সঙ্গে উল্লিখিত পরিবারের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন এবং তাৎক্ষণিক ওই পরিবারের সদস্যদের নিজ বাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোয়ারেন্টিনে রাখার স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাকে নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৬০ জন সদস্যের মধ্যে আমি খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক তুলে দিই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, পরে তাঁদের যার যার ঘরে পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে উল্লিখিত বর্বরোচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যের ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মানবিক পুলিশিংয়ে ১৭টি পরিবারের নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় তাঁদের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে।

Comments